ঢাকা যেন তপ্ত দ্বীপ

ভয়ংকর হয়ে উঠেছে বৈশাখ। এবার রাজধানী ঢাকাতেও ‘মরুভূমির লু হাওয়া’ ছড়াচ্ছে। দেশজুড়ে গ্রীষ্মের অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ইটপাথরের নগরী ঢাকাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা আর নিশ্চল বাতাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বৈশ্বিক উষ্ণতা ভূমিকা রাখলেও ধ্বংসাত্মক নগরায়ণই এই তাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ধ্বংসাত্মক নগরায়নের কারণ ঢাকা ‘হিট আইল্যান্ডে’ পরিণত হয়েছে। নির্বিচারে নগর এলাকায় গাছপালা ও জলাধার ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকার এমনো ওয়ার্ড আছে যেখানে ৯০ ভাগই কংক্রিট। ফলে তাপ আটকে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ কারণে গত সাত বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে তিন ডিগ্রি। তিন দশকের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ছয় দশকে অসহনীয় তপ্ত দিনের সংখ্যা বেড়েছে অন্তত তিনগুণ। এতে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে গিয়ে আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে। ঢাকায় উচ্চ তাপমাত্রার কারণে প্রতি বছর ৬০০ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এ ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, আবহাওয়াবিদ এবং নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক বছরে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। ফলে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে তাদের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশেষজ্ঞরা নগরায়ণের পাশাপাশি শহরগুলোকে কীভাবে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব করা যায়, সে পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে, শহরে সবুজায়ন বৃদ্ধি ও নতুন নতুন জলাধার সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই বলে তারা মনে করছেন।

মূলত ৫ বৈশাখ বা ১৯ এপ্রিল থেকে উচ্চ তাপমাত্রা অর্থাৎ দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও যশোর অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র দাবদাহে।  গত ২০ এপ্রিল যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১০ বছরের এটিই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ২৬ এপ্রিল সেই রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত এটিই এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এ ছাড়া এ বছর একটানা তাপপ্রবাহের ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে আবহাওয়া। এখন পর্যন্ত ১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ২৭ দিন ধরে দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে।

১৯ এপ্রিল তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮ এপ্রিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক শূন্য ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৭ এপ্রিল ছিল ৪০ দশমিক শূন্য ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরমের অনুভূতি ও অস্বস্তি প্রকৃত তাপমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। যার ফলে দেশজুড়ে জনজীবনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। অত্যাধিক গরম স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। স্বাস্থ্য বিভাগ তীব্র গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

তীব্র তাপ অনুভবের আট কারণ ॥ ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বাড়ায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে স্থানীয় কারণগুলো। মূলত আটটি কারণে স্থানীয়ভাবে তাপমাত্রা বাড়াছে। এর সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ যুক্ত হয়ে ঢাকায় তীব্র তাপ অনুভূত হচ্ছে।