তীব্র গরমে বেড়েছে শিশু রোগী, শয্যাসংকটে মেঝেতে চিকিৎসা

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে চলছে শিশুদের চিকিৎসা।

সারা দেশের মতো কুমিল্লাতেও তীব্র গরমে অস্থির জনজীবন। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েডসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।তবে এই গরমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। 

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরমজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগই শিশু। বর্তমানে শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতেই শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন বেড়েই চলছে শিশু রোগীর সংখ্যা।এ অবস্থায় গরমে সুস্থ থাকতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সুতি কাপড় পরা এবং বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের পর হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। তাদের বেশির ভাগ শিশু রোগী। কুমেক হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৪০টি।

কিন্তু রবিবার বিকেল পর্যন্ত ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাই ছিল ১১৭ জন। এর আগের দিন শনিবার এই সংখ্যা ছিল ১২৮ জন। এদের সবাই জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন গরমের কারণে শিশু রোগী বেশি।

হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনেও প্রচণ্ড ভিড়। শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংকটের কারণে মেঝে ও বারান্দার সবখানেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়। 

কুমেক হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাসলিমা জানান, প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। এর পরও চেষ্টা করছেন রোগীকে সঠিক সেবা দেওয়ার। 

হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত অন্য চিকিত্সক ও নার্সরা জানান, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড রোগীর চাপ বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে এই হাসপাতালে নিয়মিত ২০০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। বর্তমানে নিয়মিত ৪৫০ থেকে ৫৫০ জন রোগী আসছে। তাদের বেশির ভাগই তীব্র গরমে অসুস্থ হওয়া।

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টি, গরম আবার ঠাণ্ডা এবং মায়েদের অসচেতনতার কারণেই এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। শিশুর পোশাক, বিছানা ও ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘামলে শিশুর শরীর দ্রুত মুছে ফেলতে হবে। শিশুর যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ এলাকার বাসিন্দা তানজিমা আক্তার তাঁর একমাত্র মেয়ে ফাতিহা আক্তারকে নিয়ে এসেছেন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

তিনি বলেন, ঈদের এক দিন আগে তীব্র জ্বরের পাশাপাশি বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয় মেয়েটার। শুরুতে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নেওয়া হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে জ্বর কমলেও অবনতি হয়েছে বমি আর ডায়রিয়া পরিস্থিতির। উপায় না দেখে গত মঙ্গলবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তিন বছরের শিশুটিকে। এখনো পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে রয়েছে মেয়েটি। 
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গরমের এ সময় শিশুদের রোদ বা ঘরের বাইরে না নেওয়াই ভালো। শিশুরা বড়দের মতো আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। গরমের সময় সাধারণত জ্বর, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, ডিহাইড্রেশন অর্থাত্ শরীরে পানিশূন্যতা বা স্বল্পতার রোগী বেশি দেখা যায়। তাই শিশুদের বিষয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।

তিনি বলেন, গরমের এ পরিস্থিতিতে ফলের শরবত, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, গ্লুকোজ ও পুষ্টিকর রসালো ফল বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীর থেকে ঘাম হয়ে বের হয়ে যাওয়া পানির চাহিদা পূরণ হবে। তবে গরমের কারণে ঠাণ্ডা পানি,  বরফ কিংবা রাস্তার পাশের বিভিন্ন ধরনের শরবত এবং খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে সবাইকে। শিশুদের এই গরমে ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করতে হবে, নিয়মিত গোসল করাতে হবে। এ সময় বাচ্চাদের অবশ্যই ফোটানো পানি ও ফ্রেশ খাবার খাওয়াতে হবে। মায়েরা একটু সচেতন হলেই শিশুরা ভালো থাকবে।