দেশে এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে
পারদ যেন আর নিচের দিকে নামবে না! প্রতিদিনই গরম বাড়ছে। গতকাল শনিবার দুপুরের ঠা ঠা রোদে রাজধানীবাসীর ছিল হাঁসফাঁস অবস্থা। অবশ্য চুয়াডাঙ্গাবাসীর অবস্থা ছিল গরমে সেদ্ধ হওয়ার মতো। গতকাল সেখানে তাপমাত্রা ছিল ঢাকার চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ওই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা গতকালের জন্য তো বটেই, এ বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। তবে আবহাওয়া বিভাগ থেকে কিছুটা সুসংবাদও দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, আজ রোববার থেকে আগামী দু-এক দিন ঢাকা, সিলেট ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
গতকাল পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আর বরিশাল, পটুয়াখালী, রাঙামাটি জেলা এবং রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে; তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, যেসব জায়গায় বৃষ্টি ও কালবৈশাখী বয়ে যাবে, সেসব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি কমতে পারে। এতে ওই এলাকার অধিবাসীরা অন্তত গরমের তীব্রতার কষ্ট থেকে একটু স্বস্তি পেতে পারেন। দেশের অন্য এলাকার অধিবাসীদের গরমের কষ্ট অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর অবশ্য মাসের শুরুতেই পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিল, এবারের এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম থাকবে। দুই বছর ধরেও একই ধরনের বাড়তি গরম ছিল। এবারও এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল। এ মাসের গড় স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে থাকছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবারের এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম থাকতে পারে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই সঙ্গে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি হতে পারে। ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে তিন-চার দিন পর তাপমাত্রা আবারও বেড়ে গরমের কষ্ট বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, দুই বছর ধরে গ্রীষ্মকালে এল নিনো নামে আবহাওয়ার একটি বিশেষ অবস্থা বিরাজ করছে। এর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকছে। গত দুই বছর এপ্রিল ও মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার অনেকগুলো রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। গত বছর এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠে।
প্রচণ্ড গরমে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে গরমের তীব্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে ছিল বেশি। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, দেশের বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকছে। আজ সন্ধ্যা ছয়টায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল ৬২ শতাংশ, যা এ সময়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে থাকে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরমের কষ্ট বেশি অনুভূত হচ্ছে।
>