ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় গাজায় একদিনেই নিহত ৮১, মোট প্রাণহানি ৫৪ হাজার ছুঁইছুঁই
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান অভিযানে রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৮১ জন ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ৫৩ জনই গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৯ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে এ তথ্য। সংঘাতের ১৯তম মাসে প্রবেশ করে এই সংখ্যা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) থামছে না।
এদিকে ২০২৪ সালের ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবারও হামলা শুরু করে আইডিএফ, যদিও তার আগে ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর চাপে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই যুদ্ধবিরতি ছিল সাময়িকই। ফের শুরু হওয়া এই সামরিক অভিযানে শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টাতেই গাজা শহরে নিহত হয়েছেন ৫৩ জনসহ মোট ৮১ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন অন্তত ১৬৯ জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, যাদের জীবিত না মৃত তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই হত্যাযজ্ঞের শুরু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন গাজা শাসনকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। হামাসের ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
আরও পড়ুনঃ পুতিনকে ‘উন্মাদ’ বললেন ট্রাম্প
এ পর্যন্ত টানা দেড় বছরের সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৯৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২২ হাজার ৯৬৬ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই হতাহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
আইডিএফের সর্বশেষ একদিনের অভিযানে নিহত ৮১ জনের মধ্যে ৫৩ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। শহরের আবাসিক এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। আহতদের অনেকেই গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন, যার ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ধ্বংসস্তূপে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধার তৎপরতা চালানো গেলেও চলমান বোমাবর্ষণের কারণে সেটাও ঝুঁকিপূর্ণ।”
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, এখনো হামাসের হাতে অন্তত ৩৫ জন জিম্মি জীবিত রয়েছেন এবং সামরিক অভিযান চালিয়েই তাদের উদ্ধার করা হবে। আইডিএফের মুখপাত্র বলেছেন, “এই অভিযান চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত হামাসকে সম্পূর্ণভাবে দুর্বল করা যায় এবং সকল জিম্মিকে মুক্ত করা সম্ভব হয়।”
গত আড়াই মাসের দ্বিতীয় দফার অভিযানে ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৮২২ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। হামলার ধরন এবং মাত্রা বিচার করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একে ‘গণহত্যার দিকে ধাবমান’ একটি বিপর্যয় বলে মনে করছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা একাধিকবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবুও নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, “অভিযান থামবে না, যতক্ষণ না হামাস ধ্বংস হয় এবং জিম্মিদের উদ্ধার করা যায়।”
>