এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ
সংগ্রাম অনলাইন: দেশে মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় চাপ খাদ্যে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০.২২ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। বাড়তি এই মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে।
গতকাল সোমবার চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে কিছুটা কমে ৯.৭৪ শতাংশ হয়েছে। গত মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৮১ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে গড় মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.৭ শতাংশ।
গড় মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে ১০ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এ সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০.২২ শতাংশ। এর আগের মাসে এই হার ছিল ৯.৮৭ শতাংশ। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৭৬ শতাংশ।
গত অক্টোবরে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৬ শতাংশ।
বিআইডিএসের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাছের দাম। গত এক বছরে মাছের দাম ২০ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। এরপর রয়েছে পোলট্রি বা খামারের মুরগির দাম। দেশের পোলট্রি খাদ্যের বড় অংশই আমদানিনির্ভর।
গত দুই বছরে আমদানি করা এসব খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। তবে অধিক হারে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি। মূলত খাদ্যবহির্ভূত পণ্য মূল্যের কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এদিকে গড় মূল্যস্ফীতি শহরে কমলেও গ্রামে বেড়েছে। অর্থাৎ গত মাসে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। তবে ‘সরকারের হিসাবের চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি’ বলছে বিআইডিএস।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সুদহার বাড়ানো বা এমন পৃথক পদক্ষেপ নিলে হবে না। এর সঙ্গে শুল্ক কমানোসহ সমন্বিতভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, পোলট্রি খাদ্যে শুল্ক কমানো প্রয়োজন। এটি কমানো হলে তা মাছ ও মুরগির মতো পণ্যের দাম কমাতে সহায়ক হবে। এতে মূল্যস্ফীতিও কমবে।
এপ্রিলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এ মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয়েছে ৯.৩৪ শতাংশ। মার্চ মাসে এই হার ছিল ৯.৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.৩০ শতাংশ। মূলত খাদ্যবহির্ভূত পণ্য মূল্যের কারণেই সামান্য কমছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি।
বিবিএসের মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। ওই মাসে গ্রামের গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৯২ শতাংশ, যেখানে শহরাঞ্চলের গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৪৬। এপ্রিলে গ্রামাঞ্চলে খাদ্যপণ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি দুটোই বেশি ছিল।
বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে যেখানে শহরের গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৪৬ শতাংশ, সেখানে গ্রামে ৯.৯২ শতাংশ। গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি যেখানে ১০.১৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামে ১০.২৫ শতাংশ। একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি শহরে যেখানে ৯.০১ শতাংশ, সেখানে গ্রামে ৯.৬০ শতাংশ। অর্থাৎ সব দিক থেকে শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি।
অন্যদিকে দেশের মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, সেই হারে মজুরি বাড়ছে না। অর্থাৎ দেশের মানুষের আয়ের চেয়ে খরচ করতে বেশি হচ্ছে। বিবিএসের তথ্য মতে, এপ্রিল মাসে দেশে মজুরি বৃদ্ধির হার ৭.৮৫ শতাংশ। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ ব্যয় বেশি।
এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ৯.৭৪ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, চলতি বছরের এপ্রিলে তা ১০৯ টাকা ৭৪ পয়সায় কিনতে হয়েছে। আর গত বছরের এপ্রিলে যে কাজের মজুরি ১০০ টাকা ছিল, চলতি বছরের এপ্রিলে একই কাজে মজুরি বেড়েছে মাত্র ১০৭ টাকা ৮৫ পয়সা।
অর্থাৎ আয়ের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দুই টাকা।
দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর মধ্যে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু তাতেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার চাপ বাড়ায়। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে গেলে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে।
>