কানাডায় ভয়াবহ দাবানলের তাণ্ডব, সরানো হচ্ছে হাজারো মানুষ
কানাডার দেশটির মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের ম্যানিটোবা প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়া এই দাবানল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনীর উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পুরো প্রদেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে। শনিবার (৩১ মে) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, কানাডার ম্যানিটোবা প্রদেশে দাবানল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেনাবাহিনীর উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে বিপন্ন বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। শুধু ম্যানিটোবাতেই জ্বলছে ২৫টি দাবানল, যার মধ্যে ১০টি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
পাশাপাশি সাসকাচোয়ান প্রদেশেও চলছে ১৬টি দাবানল, যার মধ্যে ৭টিকে “অনিয়ন্ত্রিত” ঘোষণা করেছে কানাডার ইন্টারএজেন্সি ফরেস্ট ফায়ার সেন্টার (সিআইএফএফসি)। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘ গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া দাবানলের বিস্তারকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে ম্যানিটোবার উত্তরাঞ্চলের ফার্স্ট নেশনস সম্প্রদায় পুকাতাওয়াগান সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সরাতে কানাডিয়ান আর্মড ফোর্সেস, ম্যানিটোবা ওয়াইল্ডফায়ার সার্ভিস এবং হেভি আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম যৌথভাবে কাজ করছে। বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মানুষকে সরানো হচ্ছে নিরাপদ স্থানে।
আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হলে বিনামূল্যে গোল্ডেন ডোম পাবে কানাডা
শুক্রবার পর্যন্ত পুকাতাওয়াগান থেকে প্রায় ২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়ার কাজ বাকি ছিল। এর বাইরে আরেকটি শহর, ফ্লিন ফ্লন, যেটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার, সেখানকার সবাইকে ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শহরটিতে এখন কেবল দমকল কর্মী ও জরুরি সহায়তাকারী স্টাফরাই অবস্থান করছেন।
ধোঁয়ার ভয়াবহতা এতটাই যে, তা এখন কানাডা পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে অন্তত ২২ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সতর্কতার আওতায় রয়েছেন। মিশিগান ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিনেসোটার উত্তরাংশে বায়ুদূষণকে “সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই ধোঁয়া শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
২০২৩ সালেও কানাডায় ভয়াবহ দাবানল দেখা গিয়েছিল, যেখানে ১৭.৩ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি পুড়ে গিয়েছিল—যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তখন থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবানলের ঝুঁকি আরও বাড়বে। জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা বলছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ভূমি ও উদ্ভিদ দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে সামান্য আগুনও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ রূপে।
কানাডার বর্তমান দাবানল কেবল একটি জাতীয় সংকট নয়, বরং তা বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের একটি প্রতিফলন। বাড়তে থাকা উষ্ণতা, অনিয়ন্ত্রিত বন ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়া পরিবেশ দাবানলকে ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া, ও জলবায়ু সচেতনতায় বাস্তব পদক্ষেপ। নাহলে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন এবং আরও বিধ্বংসী রূপে ফিরে আসবে।
>