গুমের জন্য টার্গেট ও নজরদারির পদ্ধতি: গুম কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন

বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে গুমের ঘটনায় গঠিত গুম কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর চিত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের গুম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত গুমের ১,৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৭৫৮টি অভিযোগ পর্যালোচনা করা হয়েছে।

গুমের ঘটনা: পরিসংখ্যান

২০১৬ সাল গুমের ঘটনায় সবচেয়ে ভয়াবহ বছর, যেখানে ১৩০টি ঘটনা ঘটেছে। অন্যান্য বছরগুলোর তুলনামূলক তথ্য:

  • ২০০৯: ৫
  • ২০১২: ৩৬
  • ২০১৬: ১৩০
  • ২০২৪: ২১

কীভাবে টার্গেট করা হতো?

গুমের শিকার ব্যক্তিদের টার্গেট করার জন্য দুইটি পদ্ধতি চিহ্নিত হয়েছে:

  1. নেটওয়ার্কভিত্তিক পদ্ধতি
    • বন্দীদের নির্যাতন করে অন্যদের নাম জানানো বাধ্য করা হতো।
    • এভাবে নতুন টার্গেটের তালিকা তৈরি হতো।
    • নিরপরাধ ব্যক্তিদেরও এভাবে গুমের শিকার হতে হয়েছে।
  2. রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী নির্দেশনা
    • রাজনৈতিক প্রভাব বা ব্যক্তিগত স্বার্থে সরাসরি নির্দেশ দিয়ে গুম করানো হয়েছে।
    • উদাহরণ: নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, যেখানে র‍্যাবের এক কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে কাজ করেছিলেন।

নজরদারি: কীভাবে পরিচালিত হতো?

গুমের টার্গেট করা ব্যক্তিদের উপর নজরদারির প্রধান হাতিয়ার ছিল মুঠোফোন প্রযুক্তি

  • ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি)ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) মাধ্যমে ব্যক্তির ফোন কল, অবস্থান এবং কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হতো।
  • বাহিনীগুলোর যৌথ নজরদারিতে ডিভাইস ও প্রযুক্তি সরবরাহ করত ডিজিএফআই
  • ধরার আগে সন্দেহজনক কল দেওয়া হতো; এতে টার্গেটের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হতো।

গুমের প্রক্রিয়া

  1. সাদাপোশাকধারীদের মাধ্যমে অপহরণ
    • এক বাহিনী ভিন্ন বাহিনীর পরিচয়ে কাজ করত।
    • বন্দীকে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে হাতবদল করা হতো।
  2. হত্যা বা মুক্তি
    • নির্দিষ্ট বাহিনীর অংশগ্রহণে হত্যার ঘটনা ঘটত, কিন্তু অংশগ্রহণকারীরা জানতেন না কেন হত্যা করা হচ্ছে।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা

  • হুম্মাম কাদের চৌধুরী জানান, তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সময় শর্ত দেওয়া হয়েছিল রাজনীতি না করার এবং দেশত্যাগ করার।
  • অপর এক ব্যক্তি বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসা নিয়ে ফোনে আলোচনার বিষয় নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যা থেকে তিনি বুঝতে পারেন যে নজরদারি চলছিল।

কমিশনের সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ

গুমের ঘটনাগুলো তদন্তে জটিলতার অন্যতম কারণ হলো:

  • বাহিনীগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা এবং একাধিক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা।
  • নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাব এবং তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা।

গুম কমিশন আরও তথ্য সংগ্রহে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এ বিষয়ে জোরালো উপসংহার টানার জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে।