ট্রাম্পের প্রভাব ঠেকাতে কানাডার ‘নেশন বিল্ডিং’ রূপকল্পে চমক! 

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানিয়েছেন, তার সরকার এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে, যা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বড় আকারের প্রকল্পগুলো দ্রুত অনুমোদনের পথ সুগম করবে—বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের প্রেক্ষাপটে।

সোমবার (২ জুন) কানাডার প্রদেশ ও অঞ্চলগুলোর নেতাদের সঙ্গে এক “অত্যন্ত ফলপ্রসূ” বৈঠকের পর কার্নি তার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। “গত ১০ বছরে এটাই আমাদের সেরা বৈঠক,” সাংবাদিকদের বলেন অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড।

প্রধানমন্ত্রী কার্নি জানান, তার পরিকল্পনা হলো একটি নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করা—যেখানে তেল ও গ্যাস পাইপলাইন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাণিজ্যিক করিডোরের মতো তথাকথিত “জাতি গঠনের” প্রকল্পগুলো থাকবে এবং এমন একটি কাঠামো গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলো দুই বছরের কম সময়ের মধ্যেই অনুমোদন পাবে।

কানাডাকে “জি৭ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতিতে” পরিণত করা এবং ভবিষ্যতের জন্য দেশের স্বনির্ভরতা ও সহনশীলতা নিশ্চিত করা তার লক্ষ্য। “এই বৈঠক দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা নিজেরাই নিজেদের যা দিতে পারি, তা কোনো বিদেশি সরকার কেড়ে নিতে পারে না,” বলেন কার্নি।

এটি ছিল এপ্রিলের ফেডারেল নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কানাডার প্রিমিয়ারদের সঙ্গে তার প্রথম বৈঠক। কার্নি তার নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক মোকাবিলায় কানাডার অর্থনীতি শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই কানাডার স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি শিল্পে শুল্ক আরোপ করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, বুধবার থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করা হবে, যাতে “মার্কিন স্টিল শিল্প আরও সুরক্ষিত” হয়।

তবে কার্নি এই শুল্ককে “অন্যায় ও অবৈধ” বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, ইউএস-কানাডা বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঁ সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন পুনরায় বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে।

আরও পড়ুনঃ কানাডায় ভয়াবহ দাবানলের তাণ্ডব, সরানো হচ্ছে হাজারো মানুষ

এই সময়ে, কার্নির সরকার “জাতীয় স্বার্থের” প্রকল্পগুলোর ওপর মনোযোগ দেবে, যাতে কানাডা তার সম্পদ আরও বেশি দেশে রপ্তানি করতে পারে, নিরাপত্তা জোরদার করতে পারে এবং অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে।

এই প্রকল্পগুলো প্রদেশ কিংবা বেসরকারি খাত থেকেও আসতে পারে। তবে শর্ত হলো—প্রকল্পগুলোর “অস্বীকার করা যায় না এমন অর্থনৈতিক উপকার” থাকতে হবে এবং “সফলভাবে বাস্তবায়নের উচ্চ সম্ভাবনা” থাকতে হবে। প্রকল্পগুলোকে পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং কানাডার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে অগ্রাধিকারযোগ্য হতে হবে, বলেন কার্নি।

কার্নি আরও বলেন, এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে মহাসড়ক, রেললাইন, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, পাইপলাইন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রকল্প এবং বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

আরেকটি অগ্রাধিকার হলো আর্কটিক অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণ—যা অঞ্চলটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সেখানে কানাডার সার্বভৌমত্ব সুদৃঢ় করবে। এই অঞ্চল নিয়ে চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ কর্তৃত্ব বিস্তারের চেষ্টায় রয়েছে। কিছু প্রদেশ ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছে, তবে কোন কোন প্রকল্প অনুমোদন পাবে—সে বিষয়ে কিছু জানাননি কার্নি।

অ্যালবার্টার প্রিমিয়ার ড্যানিয়েল স্মিথসহ অন্যান্য প্রিমিয়াররা—যারা পূর্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচক ছিলেন—কার্নির সঙ্গে প্রথম বৈঠকের পর বেশ ঐক্যবদ্ধ মনোভাব দেখিয়েছেন।

ডগ ফোর্ড বলেন, “সব নেতার মধ্যে দারুণ সহযোগিতা হয়েছে,” আর স্মিথ বলেন, তিনি কার্নির পরিকল্পনায় “উৎসাহিত” হয়েছেন। তবে বিতর্কিত প্রকল্প—যেমন তেল ও গ্যাস পাইপলাইন—নিয়ে প্রদেশগুলোর ঐকমত্য হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

এদিকে, ফার্স্ট নেশনস আদিবাসী নেতারা কার্নির পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের জমি ও পানির অধিকার উপেক্ষা করা হতে পারে। তারা আরও পরিষ্কারভাবে জানতে চেয়েছেন—এই প্রকল্পগুলোতে তারা কীভাবে সম্পৃক্ত থাকবেন।

মাসুদুজ্জামান