নর্থ মেসিডোনিয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ আগুন : নিহত ৫৯, আটক ১০

নর্থ মেসিডোনিয়ার কোচানি শহরের একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো দেশকে শোকে ভাসিয়ে দিয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৫২ জন। এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

রোববার (১৬ মার্চ) স্থানীয় সময় ভোররাত ২টা ৩০ মিনিটে এই ঘটনা ঘটেছে, যখন ‘পালস ক্লাব’ নামে নাইটক্লাবটিতে দেশটির জনপ্রিয় হিপ-হপ ব্যান্ড ডিএনকে’র কনসার্ট চলছিল। প্রায় ৫০০ দর্শক ক্লাবটিতে উপস্থিত ছিলেন, যারা হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া আগুনের কারণে চরম বিপদের মুখে পড়েন। আগুন দ্রুত ছাদে ছড়িয়ে পড়ে, কারণ কনসার্ট চলাকালীন পটকা জাতীয় আতশবাজির আগুন দাহ্য পদার্থে লেগে যায়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভবনে দ্রুত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় দর্শকদের অনেকেই বের হতে পারেননি, কারণ ক্লাবটির নির্গমন পথ ছিল সংকীর্ণ এবং পেছনের দরজাটি তালাবদ্ধ ছিল। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বুলগেরিয়া, গ্রিস, সার্বিয়া ও তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট গোর্দানা সিলিয়ানভস্কা-দাভকোভা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ ইয়েমেনে হত্যা থামান, ইসরায়েলের সমর্থন বন্ধ করুন : ট্রাম্পকে ইরানের হুঁশিয়ারি

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পানচে তস্কোভস্কি জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে ক্লাবটির কার্যক্রম চালানোর কোনো বৈধ লাইসেন্স ছিল না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, কনসার্ট চলাকালে আতশবাজির আগুন ছাদে লেগে যায় এবং মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ক্লাবটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

সরকারি কৌঁসুলির দপ্তরের মুখপাত্র বিলজানা আরসোভস্কা জানিয়েছেন, আটক ১০ জনের মধ্যে সেসব কর্মকর্তাও রয়েছেন, যারা ক্লাবটিকে অনুমোদন দিয়েছিলেন। তদন্তে ক্লাব পরিচালনার পেছনে কোনো দুর্নীতি বা ঘুষ লেনদেন ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে জানা গেছে, ক্লাবটি একটি পুরোনো কার্পেট গুদামকে রূপান্তর করে গড়ে তোলা হয়েছিল এবং সেখানে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল।

নর্থ মেসিডোনিয়ার সরকার এই মর্মান্তিক ঘটনায় সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী হ্রিস্তিজান মিকোস্কি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। প্রেসিডেন্ট সিলিয়ানভস্কা-দাভকোভা বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন এমন অনিয়ম ও দুর্বল নিরাপত্তার কারণে কোনো প্রাণহানি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা মানদণ্ড কঠোরভাবে অনুসরণ করা জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষের জীবন আর কখনো এমন ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন না হয়।

মাসুদুজ্জামান রাসেল