বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, গুলিবর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণ বাড়ছে লালমনিরহাট সীমান্তে

লালমনিরহাট জেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর আগ্রাসী অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের নানা ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক তৈরি করেছে।

কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, গুলিবর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে সীমান্ত এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। এসব ঘটনার ফলে কৃষিকাজে নেমেছে স্থবিরতা, বিশেষ করে জিরো পয়েন্টে বিকাল পাঁচটার পর যাতায়াতে বাধা এবং আবাদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে গরু বা অন্যান্য পণ্য আনার সন্দেহে বিএসএফ প্রায়শই অনুপ্রবেশ করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটায়। এসব অভিযানে নিরীহ গ্রামবাসীরাও ভুক্তভোগী হচ্ছেন। কেউ কেউ জানান, মাঠে কাজ করতে গেলে বিএসএফ সদস্যরা তাদের হুমকি ও নির্যাতনের মুখে ফেলে, এমনকি কখনও কখনও তাদের কৃষিজমি পর্যন্ত দখলের চেষ্টা করে।

আরও পড়ুনঃ কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর নিহত

সীমান্তবর্তী চাবাগানের ছবি তুলতে গিয়ে ২ এপ্রিল দুইজন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। তবে বিজিবির কড়া প্রতিবাদের মুখে সেদিনই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। ১৭ এপ্রিল হাতিবান্ধা সীমান্তে ঘাস কাটার সময় হাসিবুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় কৃষক বিএসএফের গুলিতে আহত হন এবং তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে গোটা লালমনিরহাট সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং জেলা প্রশাসন সীমান্তে উত্তেজনা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে একযোগে কাজ করছে। তিন ফুটের বেশি উচ্চতার ফসল চাষ না করার নির্দেশনা ছাড়াও সীমান্ত আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক এবং স্থানীয় ফোর কমিটির সভার মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে।

রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত লালমনিরহাট জেলার। গত পাঁচ বছরে এই জেলার প্রায় ২৮০ কিলোমিটার সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে বহু বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, যদিও সরকারি পরিসংখ্যানে নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নয়নে পতাকা বৈঠকসহ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে বিজিবি।

রোজিনা