রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে সমতা ফেরালো বাংলাদেশ
কুশল মেন্ডিস পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং-ঝড় তোলায় দম বন্ধ করা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। ১০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কা ৭৫ রান করে ফেলায় তাদের কোচ সনাথ জয়সুরিয়ার মুখে হাসি ফুটেছিল। এই লঙ্কান কিংবদন্তি হয়তো মেন্ডিসের মাঝে নিজের তরুণ বয়সের ব্যাটিংয়ের মিল দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি যেমন মারকাটারি ব্যাটিং দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বহু ম্যাচে জয় উপহার দিয়েছেন, কোচ হিসেবে হয়তো কুশলকে সেই আস্থার জায়গায় দেখতে পাচ্ছিলেন। যদিও বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম তাঁকে আউট করে ম্যাচের লাগাম হাতে নেন।
টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত লড়ে লঙ্কান কোচের প্রত্যাশা পূরণ হতে দেয়নি বাংলাদেশ। পরে বোলিং করার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ১৬ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে এনেছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। ১-১ সমতা ফেরায় ক্যান্ডিতে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাড়তি উত্তেজনা যোগ হবে। ফাইনালের একটি আবহ থাকবে তাতে।
এদিকে কলম্বোর প্রেমাদাসায় রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ভালো না। এ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বেশ কয়েকবারই যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং কলাপসে ৭৭ রানে হেরে যেতে হয়। ১০০ থেকে ১০৫ রানে ৭ উইকেট পতনে জেতা ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রেমাদাসার ট্র্যাজেডি থেকে মুক্তি পেতে মেহেদী হাসান মিরাজ যে আগে ব্যাট করার পথ খুঁজছিলেন, ক্রিকেট দেবতা তার মনের কথা শুনে টসে জিতিয়ে দেন। নিজেদের পছন্দে ব্যাট করতে নেমে টপঅর্ডার ভালো শুরুও পায়।
১৪ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পরও তাই পাওয়ার প্লে থেকে ৬৫ রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে। এই ঝোড়ো রানের কারিগর ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ৫৫ বলে ৬৩ রানের বেশির ভাগই ছিল তার। বাঁহাতি এই ওপেনার পরের জুটিতেও অবদান রাখেন। ৬টি চার ও ৩টি ছয় মেরে ৬৯ বলে ৬৭ রান করে লেগস্পিনার হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হন তিনি। ইমন যেখানে শেষ করেন, তাওহীদ হৃদয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের শুরু সেখান থেকে।
আরও পড়ুনঃ ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে বাংলাদেশের মেয়েরা
পরবর্তীতে শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও জাকের আলীকে নিয়ে ছোট ছোট দুটি জুটি গড়েন মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার। ৫১ রান নিয়ে তিনি আউট হলে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা উঁকি দেয়। তবে পেস বোলিং অলরাউন্ডার তানজিম হাসান সাকিব সেখান থেকে ইনিংস টেনে নেন ২৪৮ রানে। ২১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তানজিমের ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য ছিল অকুতোভয়। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও দুটি করে চার-ছয় মেরেছেন তিনি।
প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের পিচের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্বাগতিক শ্রীলঙ্কান ব্যাটাররা জানেন, ২৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হলে টপঅর্ডারে বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে হবে। ৬ রানে পাথুম নিশাঙ্কাকে হারালে কুশল মেন্ডিস সেই বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন। বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২২ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন তিনি। লঙ্কান এ টপঅর্ডারের রান তোলার গতি ছিল গায়ে কাঁটা দেয়ার মতোই।
পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে সাড়ে ৭ করে রান তোলেন তারা। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম কুশল মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলায় ঝড় থামে। যদিও এই মেন্ডিসকে ফেরাতে রিভিউ নিয়ে সফল হতে হয়েছে বোলারকে। ৩১ বলে ৫৬ রান করেন কুশল। কামিন্দু মেন্ডিস ধরে খেলে জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তানভীর বিচ্ছেদ ঘটান। ৫১ বলে ৩৩ রান করেন তিনি।
কামিন্দুর পূর্বে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান চারিথ আসালঙ্কাকে আউট করে পার্টটাইমার শামীম পাটোয়ারি স্বাগতিক ব্যাটিং লাইনআপের কোমর ভেঙে দেন। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ৫ উইকেট নিলে জয়ের পথে তৈরি হয়। ম্যাচ জিততে শেষ ৫০ বলে ৭০ রান করতে হতো শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২ উইকেট।
তবে জানিথ লিয়ানাগে সেখান থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেয়ার মতো পরিস্থিতিতে ফেলেন বাংলাদেশকে। মুস্তাফিজুর রহমান একদিক থেকে ভালো বোলিং করলেও অন্য প্রান্তে হাসান মাহমুদ ছিলেন খরুচে। শেষ ৬ ওভারে যেখানে ৮ রান করে নেয়ার প্রয়োজন হতো স্বাগতিকদের। ৭৮ রানে মুস্তাফিজ জেনিথকে আর সাকিব শেষ ব্যাটার চামিরাকে আউট করলে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ।
>