সয়াবিন তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ভোজ্য তেল সয়াবিনের বাজার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম আরো বেড়েছে। পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে এভাবে দফায় দফায় সয়াবিনের দাম বাড়ায় শঙ্কিত ভোক্তারা।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে সয়াবিন তেলের দাম নিম্নমুখী। এছাড়া গত অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। তা আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। তাহলে সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে কেন? এদিকে সয়াবিনের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে চাল ও খেজুরের দামও বেড়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিন নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করে, সেই প্রতিবেদনেও পণ্যগুলোর দাম বাড়ার চিত্র তুলে ধরেছে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারে পাঁচ টাকা বেশি। আর দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৫৫ টাকা ও এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে দুই টাকা বেড়ে ১৭৫ থেকে ১৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, সপ্তাহের ব্যবধানে সাধারণ মানের খেজুর কেজিতে ২০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে তা ২৮০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের মধ্যে সরু ও মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে। যদিও বাস্তবে পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে আরো বেশি।

আরও পড়ুনঃ ভ্যাট আদায়ে হয়রানি বন্ধের দাবি ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে আগের বছর একই সময়ের তুলনায় সয়াবিন তেল ও খেজুরের আমদানি বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে সয়াবিন তেলের আমদানি ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টনে ও খেজুরের আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ৪২০ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই বাজারে।

রাজধানীর চারটি বাজার পর্যবেক্ষণ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সম্প্রতি দেখতে পেয়েছে, ডিলার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ভোক্তার পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন গত সপ্তাহে ভোজ্য তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আয়োজিত এক সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, বর্তমানে সয়াবিন তেল নিয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। তেলের ক্ষেত্রে আমরা ছয়টি রিফাইন প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। গত তিন-চার মাস যাবত্ তেল নিয়ে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন তেলের উৎপাদন কত কোম্পানিগুলোকে তা দৈনিক ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাতে হবে।

আমদানি বেড়েছে চিনি, ছোলারও

প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাসে চাহিদার শীর্ষে থাকা চিনি, ছোলাসহ অন্য পণ্যগুলোর আমদানিও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এই চার মাসে চিনি আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। আলোচ্য সময়ে ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন। ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি।

উল্লেখিত সময়ে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বেড়ে মটর ডালের আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন। রসুনের আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৬১ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন। আদার আমদানি ৫৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন। এই প্রবৃদ্ধি বাজারে সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক ও পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মাসুদুজ্জামান রাসেল