শতাধিক অর্থ পাচারকারীর ‘হিট লিস্ট’ তৈরি করেছে দুদক

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারে শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার বিষয়টি উদঘাটন করেছে। এর মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও দুবাইসহ বিভিন্ন স্থানে ৮০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৯ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা) স্থানান্তর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্কেল এবং জরুরীতার পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এই সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে দুদকের ‘হিট লিস্ট’ তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় বাংলাদেশের কিছু উচ্চ-প্রোফাইল ব্যক্তিত্ব অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, এতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় শুধু দেশের শীর্ষ অর্থ পাচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তি একাই বিদেশে ৮০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। পরবর্তীতে তালিকায় আরো দুজনের নাম যুক্ত হবে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মোঃ আখতার হোসেন বলেন, “বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আমরা পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি। দেশে এখন পর্যন্ত 71 জন MLAR (পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ) পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত তহবিল পুনরুদ্ধারের জন্য 12টি দেশ তাদের 27টির জন্য আইনি সহায়তা পেয়েছে।

দুদক বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় বোর্ডের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তার “হিট লিস্ট” তৈরি করেছে। রাজস্ব (NBR), এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন স্টোলন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ (স্টার)।

তালিকায় রয়েছেন- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ তার স্ত্রী রুখমিলা জামান। বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য স্বত্বাধিকারীরা। নাসা গ্রুপের মালিক ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। সিকদার গ্রুপের পরিচালক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার, তাদের মা, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারপারসন মনোয়ারা সিকদার এবং বোন, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক পারভীন হক সিকদার। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে, চার ভাই ও তাদের পরিবার। ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম, তার স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম, মেহেদী হাসান ও মেয়ে জারিন করিম। জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত কাজী শাহেদ আহমেদের সন্তান: কাজী আনিস আহমেদ, কাজী নাবিল আহমেদ এবং কাজী ইনাম আহমেদ। নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহান বক্স মন্ডল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামসহ সদস্যরা এবং তাদের পরিবার।

এছাড়া ‘হিট লিস্টে’ চারজন হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির নাম এসেছে তারা হলেন- পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান। বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ তাদের পরিবার।

আরও তদন্তের ভিত্তিতে আরও দুই ব্যক্তি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়ত-উল-ইসলামের নাম তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে।

দুদক তার প্রাথমিক তদন্তে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১০০ ব্যক্তির বিদেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। এই ব্যক্তিরা সবাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তালিকায় রয়েছেন- আসাদুজ্জামান খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, টিপু মুন্সি, আনিসুল হক, তাজুল ইসলাম, মোঃ ফরিদুল হক খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, জাহিদ আহসান রাসেল, আনোয়ার হোসেন। , হাসানুল হক ইনু, শাম রেজাউল করিম, জাহিদ মালেক, সাবেক মন্ত্রী মো ডাঃ দীপু মনি, মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাধন চন্দ্র মজুমদার, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, কামাল আহমেদ মজুমদার, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, নসরুল হামিদ, খালিদ মাহমুদ, জুনায়েদ আহমেদ পলক, মোঃ জাকির হোসেন, ইমরান আহমেদ, মো. মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ

এই ব্যক্তিরা বিদেশে অর্থ পাচার সহ উল্লেখযোগ্য আর্থিক অপরাধের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।