সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালালেন: পাঁচ দশকের শাসনের পতনের সম্ভাবনা

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, যিনি গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়ে গৃহযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে তার শাসনব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

বিদ্রোহীদের অগ্রগতি

নভেম্বরের ২৭ তারিখ থেকে শুরু হওয়া ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী আক্রমণে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কসহ একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ হারান আসাদ। বিদ্রোহীরা রবিবার দামেস্কে প্রবেশের ঘোষণা দিলে, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায় যে আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে তাকে “একনায়ক” আখ্যা দিয়ে তার পালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্ষমতায় আসা ও শাসনের ইতিহাস

বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে তার পিতা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট হন। তার পিতা প্রায় তিন দশক সিরিয়া শাসন করেছেন। বাশার প্রথমে সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে জনগণের আস্থা অর্জন করলেও খুব দ্রুতই তার শাসনব্যবস্থা দমনমূলক হয়ে ওঠে।
সিরিয়ার “দামেস্ক বসন্ত” আন্দোলনের সময় অনেক বুদ্ধিজীবী ও আন্দোলনকারীকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়ন চালানো হয়, যা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

গৃহযুদ্ধের নির্মমতা

গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, আসাদ সরকার ৫ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু এবং অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করার জন্য দায়ী। তার শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমন করতে তিনি সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মাধ্যমে ব্যাপক দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
বিশেষ করে, ২০১৩ সালে দামেস্কের উপকণ্ঠে বিদ্রোহীদের ওপর রাসায়নিক হামলার পর, আন্তর্জাতিক মহলে তার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জারি হয়।

বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি

বাশার আল-আসাদ তার শাসনকে ধরে রাখতে রাশিয়া, ইরান এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো মিত্রদের সহায়তা নেন। তবে বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক সাফল্য তার শাসনের স্থায়িত্বকে কঠিন করে তুলেছে।
বিদ্রোহীদের লক্ষ্য ছিল তার শাসনকে উৎখাত করা। আসাদ এটিকে “বিদেশি ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন যে এটি মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পুনরায় আঁকার একটি পশ্চিমা পরিকল্পনা।

আসাদের দেশত্যাগ এবং বিদ্রোহীদের অগ্রগতি সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি মোড় নির্দেশ করে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের অবসান কীভাবে হবে এবং সিরিয়ার জনগণ কীভাবে একটি নতুন শাসনব্যবস্থা পাবে, তা সময়ই বলে দেবে।