শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শপথ
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের কৃতী সন্তানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার চেষ্টা চালায়। সেই চক্রান্তের নির্মম স্মৃতি বহন করে আজকের দিনটি।
রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আজ সকাল থেকেই সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষ। ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি।
জাতীয় নেতাদের শ্রদ্ধা
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তাঁরা। রাষ্ট্রপতি আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’
রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের অংশগ্রহণ
রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ছিল বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় পার্টি (জাপা), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও অনেক দল। পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এই দিনে অংশগ্রহণ করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফ সোহেল বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীরা একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক সমাজ গড়ার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁদের সেই স্বপ্ন আজও পূর্ণ হয়নি।’
মানুষের প্রত্যাশা ও শপথ
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষ জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যেই বৈষম্যহীন, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজও অধরা। এ জন্য তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয় জানান।
মোহাম্মদপুর থেকে আসা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তাঁর বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে তিনি আজ স্মৃতিসৌধে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা বারবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। নতুন প্রজন্ম যেন সঠিক ইতিহাস জানে এবং দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।’
ইতিহাসের পটভূমি
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের কৃতী সন্তানদের চোখ বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন স্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তাঁদের স্মরণে এই দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
আজ শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সবার কণ্ঠে একটি প্রত্যাশা—শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের গণতান্ত্রিক, মানবিক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
>