হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেসব পরামর্শ দিলো অন্তর্বর্তী সরকারকে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুতির সংগ্রামে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানানোর ওপর জোর দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানানোর সর্বোত্তম উপায় হল আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাসহ গণতান্ত্রিক সংস্কারগুলোকে দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও বলেছে, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নজরদারি ও নির্যাতনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর অতীতের অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার চেয়ে চাপও দেওয়া দরকার।

এছাড়াও সংস্থাটি বলেছে, ২০২৪ সালের হতাশাজনক কয়েকটি আলোর রশ্মির মধ্যে একটি ছিল আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি। পরপর তিনটি অন্যায্য নির্বাচনের মাধ্যমে তার দুর্নীতিগ্রস্ত ও নিষ্ঠুর শাসনের পতন দেশটিকে নিয়মতান্ত্রিক সংস্কারের সুযোগ করে দিয়েছে: স্বৈরতন্ত্র থেকে দূরে এবং গণতন্ত্রের দিকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবর্তনের এই সুযোগটি অবশ্যই একটি ভারী মূল্য দিয়ে এসেছে। প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার বাস্তবায়ন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা পূর্ববর্তী প্রশাসনের দায়ের করা অনেক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম বন্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ গোলাগুলির শব্দে ফের কাঁপছে তমব্রু সীমান্ত

মানুষ বলছে, তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইউনূসের নেতৃত্বে একটি কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন দপ্তর ও সংবিধান সংস্কারের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি দ্রুত ও দৃঢ়তার সঙ্গে এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায় তবে সবকিছু সঠিক পথে এগোচ্ছে না। তারা দেখেছে, হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের একই ধরনের নমুনা দেখা গেছে। আজকে টার্গেট সাংবাদিকসহ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাবেক সমর্থকরা। পুলিশ আবার নির্বিচারে লোকজনকে আটক করছে এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণ-ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করছে। বিষয়টি পুলিশকে কার্যত যে কাউকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখাতে এবং হুমকি দেওয়ার অনুমতি দেয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দুই মাসে হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতি বা অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে এক হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামিদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের সদস্য। অবশ্যই অতীতের অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করা উচিত। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়া গণহারে অভিযোগ কেবল ন্যায়বিচারকেই দুর্বল করে এবং অবমাননাকর অতীতে ফিরে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করার ঝুঁকি তৈরি করে।

মানবাধিকার সংস্থাটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের বাইরেও অনেক মানুষ আছেন, যারা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে কাজ করতে চান। এর জন্য কিছু বিশেষজ্ঞকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারেন। সরকারের উচিত মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় এবং জাতিসংঘের অন্যান্য অধিকার বিশেষজ্ঞদের কারিগরি সহায়তা, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন সংগ্রহ করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান নেতৃত্ব ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান স্বৈরতন্ত্রকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। এটি একটি স্মরণীয় কাজ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের তালিকাভুক্ত করা তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে।

মাসুদুজ্জামান রাসেল