কলাগাছে নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা
একসময় কলার কাঁদি তুলে নিলে কলাগাছ ফেলে দেয়াই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এখন সেই গাছই এখন হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস। আর এতে স্থানীয় শত শত পরিবার পেয়েছে জীবিকার নতুন দিগন্ত। আর এমন উদ্যোগের নেপথ্যে কাজ করছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার জনার্ধন দেবনাথ। তিনি বলেন, এ কাজ করে অনেকে এখন স্বাবলম্বী। এ কাজে প্রায় ২০০ লোক জড়িত আছে।
এই প্রক্রিয়াটা সহজ কিন্তু পরিশ্রমসাধ্য। প্রথমে কলাগাছ কেটে তিন থেকে পাঁচ ফুট লম্বা টুকরো করা হয়। এরপর দুই দিকের অংশ কেটে ফেলে খোলস ছাড়ানো হয়। সেই খোলস ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকানো হলে তা হয়ে ওঠে সোনালি রঙের সুতা।
স্থানীয় নারী উদ্যোক্তারা এই কাঁচামাল প্রস্তুত করেন, শুকিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে জমা দেন, যেখানে প্রতি কেজি সুতার জন্য তারা পান ৭০ টাকা। তারপর সেই আঁশ পাঠানো হয় রংপুরের কারখানায়, যেখানে তৈরি হয় কারপেট, পাপোস ও চাদরসহ নানা পণ্য।
আরও পড়ুনঃ বিএসটিআই’র অভিযানে অবৈধ সয়াবিন তেল জব্দ, কারখানা সিলগালা
আকারভেদে একটি কলাগাছ থেকে দুই থেকে তিন কেজি সুতা তৈরির কাঁচামাল পাওয়া যায়। বিদেশে এই সুতা দিয়ে তৈরি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, ফলে উৎপাদনও বাড়ছে। এই উদ্যোগ শুধু নতুন শিল্প গড়ে তুলছে না, কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছে। নেছারাবাদ ও সদর উপজেলার কলাখালীতে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার এই কাজে যুক্ত হয়েছে।
কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। তারা এখন কলা সংগ্রহের পর গাছ ফেলে না দিয়ে তা বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারছেন। কৃষি বিভাগও পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে সবাই এই সুযোগ কাজে লাগায়।
পিরোজপুর উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, কলাগাছ থেকে সুতা উৎপাদনের কাজে যারা জড়িত তাদের কয়েকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা বলেছে, সঠিকভাবে এই কাজ করতে পারলে মাসে তাদের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বাড়তি আয়ের সুযোগ রয়েছে এখান থেকে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ লোক এ কাজের সঙ্গে জড়িত। অন্যরা যদি এ কাজের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের কথা জানতে পারে তাহলে তারাও সম্পৃক্ত হবে।
কথায় আছে বুদ্ধি থাকলে পাটাতনেও মাছ ধরা যায়। তেমনি দেবনাথ সেই বুদ্ধি খাটিয়ে যেমন নিজের ভাগ্যের দরজা খুলেছেন তেমনি স্থানীয়দেরও। জনার্দ্ধন দেবনাথের আশা, এই শিল্প একদিন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
>