আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। বিশ্বব্যাপী ৮ মার্চ এ দিবসটি পালন করা হয়। বিশেষ করে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের স্বীকৃতি, ভালোবাসা প্রকাশের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় দিবসটি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। নারীর ওপর হওয়া বৈষম্য, নির্যাতনের বিরুদ্ধে করা প্রতিবাদে নারীদের জাগ্রত করাই নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নারী দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য- ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।

বেগুনিই কেন আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতীক? কখনো ভেবে দেখেছেন? নারী দিবস মূলত বেগুনির সঙ্গে সাদার মিশেল কিংবা শুধুই বেগুনি হয়। নারী দিবসের বেগুনি রং ভেনাসের, যা কি না নারীরও প্রতীক। কারণ বেগুনি নির্দেশ করে সুবিচার ও মর্যাদার; যা দৃঢ়ভাবে নারীর সমতায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম শেষে বেগুনি রং এখন নারীবাদীদের প্রতিবাদের এক অনন্য প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া প্রতিটি দিবসে আলাদা রঙের প্রতীক হওয়ার পেছনেও আছে ভিন্ন ইতিহাস। যেমন—বিশ্ব ‘শান্তি দিবস’ সবুজাভ নীল, বিশ্ব ‘শ্রম দিবস বা মে দিবসে’ লাল, পরিবেশ দিবসে ‘সবুজ রং’ ইত্যাদি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সংক্ষেপে আইডব্লিউডি বলা হয়ে থাকে। শ্রমিক আন্দোলন থেকেই উদ্ভূত হয় নারী দিবসের ধারণা। পরবর্তীকালে দিনটি জাতিসংঘের স্বীকৃত পায় এবং প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী উদ্‌যাপিত হতে থাকে।

১৯০৮ সালে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে প্রায় ১৫ হাজার নারী নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিল। মূলত এ আন্দোলনের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবস পালনের বীজ। এ আন্দোলনের এক বছর পর আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি সর্বপ্রথম জাতীয় নারী দিবস ঘোষণা করে।

আরও পড়ুনঃ রোজায় কিডনি রোগীর যা করণীয়

দিনটিকে জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পরিণত করার প্রথম উদ্যোগটি নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট ও নারী অধিকারকর্মী ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে তিনি কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ধারণার প্রস্তাব দেন। সেই সম্মেলনে উপস্থিত ১৭ দেশের ১০০ জন নারীর সবাই তার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেন।

এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৯১১ সালে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২০১১ সালে পালিত হয় দিনটির শতবর্ষ।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন ৮ মার্চই নারী দিবস পালন করা হয়?

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি যখন ক্লারা উত্থাপন করেন, তখন তিনি নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগপর্যন্ত দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট করা যায়নি বলেই উল্লেখ রয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

একই বছর রুশ নারীরা ‘রুটি ও শান্তি’র দাবিতে তৎকালীন জারের (রাশিয়ার সম্রাট) বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করেন; এর চার দিনের মাথায় গদি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল জার এবং জারের গদিতে বসা অস্থায়ী সরকার তখন নারীদের আনুষ্ঠানিক ভোটাধিকার দিয়েছিলেন।

সে সময়ে রাশিয়ায় প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নারীদের ধর্মঘট শুরু হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি, রোববার। আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই দিনটি ছিল ৮ মার্চ; পরবর্তী সময়ে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ মার্চকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মাসুদুজ্জামান রাসেল