দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেলেন লি জে-মিয়ং

পূর্ব এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছেন লি জে-মিয়ং। দীর্ঘ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার পর গতকালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দেশটির বিরোধী এই নেতা। 

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিক্ষোভ এবং বিতর্কিত সেনাশাসনের ছায়া কাটিয়ে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষেই রায় দিয়েছেন—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বুধবার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মঙ্গলবার (৩ জুন) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হন লি জে-মিয়ং। এর মাধ্যমে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের সামরিক শাসন আর ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি জনমত গড়ে তোলার সুযোগ পেলেন। 

ইউন সুক ইওলের সামরিক শাসন জারির চেষ্টা ও তা নিয়ে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভের ফলে তাকে পার্লামেন্ট অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। বর্তমানে ইউন ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি।

আরও পড়ুনঃ গাজার ত্রাণকেন্দ্রে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের গুলি

এখন দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কঠিন দায়িত্বের সামনে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে বড় জয় পাওয়া লি জে-মিয়ং। ৬১ বছর বয়সী এই রাজনীতিক মাত্র তিন বছর আগে ইউনের কাছে খুব অল্প ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। এবার ফিরেই বড় জয় পেলেন। তবে এই জয় সত্ত্বেও লি নিজেও অতীতে একাধিক রাজনৈতিক বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত ছিলেন। এমনকি পারিবারিক কেলেঙ্কারিও তার ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করেছিল।

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, নির্বাচনে লি জে-মিয়ংয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)-র প্রার্থী কিম মুন-সু, যিনি ইউন সুক ইওলের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। গত কয়েক সপ্তাহের জরিপে পিছিয়ে থাকা কিম নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল দেখে বুধবার ভোরেই নিজের পরাজয় স্বীকার করে লিকে অভিনন্দন জানান।

লি সরাসরি জয়ের ঘোষণা না দিলেও তার বক্তব্যে জয় পাওয়া নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “আমার প্রথম কাজ হবে দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেক ভোটার ব্যক্তিগতভাবে লির প্রতি আগ্রহ দেখানোর চেয়ে, ইউনের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করতেই ভোট দিয়েছেন।

রাজনৈতিক পরামর্শক সংস্থা মিন কনসালটিং-এর প্রেসিডেন্ট পার্ক সাং-মিন বিবিসিকে বলেন, “এই নির্বাচন ছিল এক ধরনের গণ-অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। মানুষ এখানে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।” তিনি আরও বলেন, “এই জয় প্রমাণ করেছে যে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ গণতন্ত্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।”

লি জে-মিয়ংয়ের সামনে এখন বহু চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ বিভাজন, সমাজে রাজনৈতিক মেরুকরণ, এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের মধ্যে দিয়ে তাকে দেশ পরিচালনা করতে হবে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে নতুন করে আলোচনায় যেতে হবে, যাতে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো যায়।

মাসুদুজ্জামান