ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তপ্ত তেহরান-তেল আবিব

বিশ্বজুড়ে যখন শান্তির আহ্বান ও কূটনৈতিক সমাধানের গুরুত্ব বাড়ছে, তখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছেছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা সোমবার (১৬ জুন) রাতভর রূপ নেয় সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও পাল্টা হামলায়। একদিকে তেল আবিব কেঁপে ওঠে বিস্ফোরণে, অন্যদিকে তেহরানের রাষ্ট্রীয় ভবনে আগুন জ্বলে ওঠে।

সোমবার স্থানীয় সময় রাতভর ইরান থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের দিকে ছোড়া হয় একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আইরন ডোম’ সক্রিয় থাকলেও, ইরানি গণমাধ্যম আইআরএনএ দাবি করে যে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ করা হয়। 

ফলে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, যার মধ্যে হাইফার একটি বড় তেল পরিশোধনাগার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন বলেও খবরে জানা যায়।

ইসরায়েলও একই সময়ে চালায় পাল্টা আক্রমণ। লক্ষ্য ছিল ইরানের রাজধানী তেহরান। সেখানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে ভবনে আগুন লেগে যায়। বিস্ফোরণের সময় একটি লাইভ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন, যার ভিডিও দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই আক্রমণের পর ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, তেল আবিবের বাসিন্দাদের যেন নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ এবার ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৭

আরও উত্তেজনা ছড়ায় ইরান যখন দাবি করে, ইসরায়েলের একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তাবরিজ শহরের আকাশে ভূপাতিত করা হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সফলতা এই হামলার জবাবে প্রমাণ দিয়েছে ইরান। অপরদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেন, তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে ‘টার্গেট’ করতে পারেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বক্তব্যের পর কড়া অবস্থান নেন। তিনি ইসরায়েলের পরিকল্পনায় সরাসরি ভেটো দেন এবং ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেন, “যদি ইরান দ্রুত পারমাণবিক চুক্তিতে না আসে, তবে তেহরানবাসীদের শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়াই ভালো।” এই বার্তা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তার প্রতিক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান জানান। তিনি বলেন, “ইরান কোনোভাবেই যুদ্ধ বিস্তার চায় না। তবে যদি আমাদের ওপর হামলা হয়, আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেব।” একইসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই আক্রমণকে ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বড় আঘাত’ বলে অভিহিত করেন।

বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উদ্বেগ বেড়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার গোষ্ঠী সংঘর্ষ বন্ধে মধ্যস্থতা করার আহ্বান জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

মাসুদুজ্জামান