যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের কড়া বার্তা! শুল্ক বাড়ালে কঠিন প্রতিশোধ
আগামী মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর আবারও শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে চীনকে নতুন করে লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে যদি কোনো দেশ চীনের অংশগ্রহণ ছাড়া সরবরাহ শৃঙ্খলা (সাপ্লাই চেইন) গড়ে তোলে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে চীন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুন মাসে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক কাঠামোর ওপর সমঝোতা হয়, যার ফলে আপাতত একপ্রকার সাময়িক শান্তি ফিরেছিল। তবে এখনও অনেক বিষয় অস্পষ্ট থাকায়, প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা এই চুক্তি ভেঙে পড়বে, নাকি স্থায়ী শান্তিতে রূপ নেবে—তা নিয়ে গভীর নজর রাখছেন।
সোমবার (৭ জুলাই) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বড় আকারে বাড়ানো হবে। যদিও এপ্রিল মাসে তিনি বেশিরভাগ দেশের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক স্থগিত করেছিলেন, সময় দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য।
তবে চীনকে তিনি বিশেষভাবে টার্গেট করেছেন। চীনের ওপর শুল্কের হার ১০০ শতাংশেরও বেশি, আর তাদেরকে ১২ আগস্টের মধ্যে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে বলা হয়েছে, নতুবা এপ্রিলে ও মে মাসে ধারাবাহিক পাল্টা শুল্ক আরোপের সময় যে আমদানি নিষেধাজ্ঞা হয়েছিল, তা আবারও কার্যকর হবে।
এদিকে চীনের সরকারি পত্রিকা পিপলস ডেইলি এক মতামত কলামে বলেছে, ‘‘একটা বিষয় একদম স্পষ্ট—সংলাপ আর সহযোগিতাই সঠিক পথ।’’ এছাড়া ‘চীনের কণ্ঠস্বর’ নামে ছদ্মনামে লেখা ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘‘ট্রাম্পের শুল্কনীতি মূলত একপ্রকার ‘বুলিং’ বা জবরদস্তি। অতীতে অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে, নীতির প্রতি অটল থাকলেই কেবল প্রকৃত অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব।’’
আরও পড়ুনঃ টানা দুই বছর ধরে প্রতিদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা আছে ইরানের
পত্রিকাটি আরও বলেছে, ট্রাম্প যদি তার ঘোষিত ‘চূড়ান্ত সময়সীমা’তে অটল থাকেন, তাহলে শুল্ক যুদ্ধের আরেক দফা শুরু হবে—এমন স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে।
পিটারসন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের চীনা পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ৫১.১ শতাংশ এবং চীনের যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ৩২.৬ শতাংশ, যেখানে দুই দেশের সব ধরনের বাণিজ্যই এর আওতায় পড়েছে।
ওই পত্রিকা প্রতিবেশী দেশগুলোরও সমালোচনা করেছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে চীনকে সরিয়ে দিয়ে নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইছে।
সম্প্রতি ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে, যার ফলে তাদের পণ্যের ওপর শুল্কহার ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে ‘ট্রান্সশিপড’ পণ্যের ক্ষেত্রে (যেসব পণ্য সাধারণত চীন থেকে আসে), শুল্কহার ৪০ শতাংশ ধরা হয়েছে।
চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল দৃঢ়। পত্রিকাটি বলেছে, ‘‘চীনের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কেউ যদি শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে, তবে চীন তা কখনও মেনে নেবে না। বরং কঠোরভাবে জবাব দেবে এবং নিজেদের বৈধ স্বার্থ রক্ষা করবে।’’
>